ভেনিস: জল-জীবনের রোমান্টিক ছন্দ

ভেনিস—নামটি উচ্চারণ করলেই চোখে ভাসে নৌকায় ভেসে চলা এক শহরের ছবি। আমার ভ্রমণের শুরু হয়েছিল সান্তা লুচিয়া রেলস্টেশনে নেমে। তখনই মনে হলো, আমি যেন কোনো বাস্তব শহরে নয়, কোনো চিত্রকল্পের মধ্যে পা রেখেছি। এখানে গাড়ির গতি নেই, শব্দ নেই—শুধু জল আর জল।
প্রথম গন্ডোলা যাত্রায়, গলার কাছে এসে আটকে গিয়েছিল কিছু আবেগ। ভেনিসের সরু সরু জলপথ দিয়ে ধীরে ধীরে নৌকা এগিয়ে যাচ্ছিল। দুপাশে শত শত বছরের পুরোনো বাড়ি, যেগুলোর জানালায় ঝুলছে ফুলের টব, পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এক অচেনা অথচ চেনা গল্প। প্রতিটি বাড়ির দরজা যেন একেকটা জলপথে খোলা প্রান্তর।
গন্ডোলিয়ারের কণ্ঠে বাজছিল ইতালিয়ান প্রেমের গান—‘O Sole Mio’। নৌকা হেলে-দুলে চলছিল, পানির ওপর ভাসছিল যেন আমার অনুভবগুলো। সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে, রোদে পানির ওপর রঙের খেলা—এক অনির্বচনীয় দৃশ্য।
আমি পৌঁছালাম পিয়াজ্জা সান মার্কো। সামনে সান মার্কোস বাসিলিকা, পাশেই বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার, আর দূরে ডোজেস প্যালেস। হাজার হাজার মানুষ কিন্তু কেউ কারও গায়ে পড়ে না। সবাই যেন নিজের মতো এক চুপচাপ ভালোবাসার মুহূর্তে ডুবে আছে।
রাতে যখন ফিরে এলাম, তখন ভেনিস একদম অন্য রকম। সব কিছুকে আড়াল করে কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো জলে পড়ে এক রহস্যময় আলো-ছায়ার জন্ম দিচ্ছে।
ভেনিসকে আমি মনে রেখেছি এক রোমান্টিক কবিতার মতো—যার প্রতিটি লাইনই গলে যায় মনে। এখানে প্রেম আছে, ইতিহাস আছে, শিল্প আছে—সব মিলিয়ে ভেনিস যেন এক জীবন্ত আবেগ, যা একবার অনুভব করলে সারা জীবন বুকে বয়ে বেড়াতে হয়।
মা/ম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: