প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড, সম্ভাবনা আরও বিশাল

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অর্জনের পেছনে থাকা এক কোটি প্রবাসীর ঘাম-রক্তের শ্রমের প্রকৃত মূল্য দেশের অর্থনীতিতে পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারণ, বাস্তব সম্ভাবনার তুলনায় অর্জিত রেমিট্যান্স অনেকটাই কম।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৪৮ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বর্তমানে অন্তত ১ কোটি প্রবাসী সক্রিয়ভাবে কর্মরত রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রতিটি প্রবাসী মাসে মাত্র ৫০০ ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠান, তাহলে বাংলাদেশের বার্ষিক রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ, বর্তমান আয় হচ্ছে তার মাত্র ৪০ শতাংশ।
অর্থাৎ, বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ (প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার) এখনো হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেল দিয়ে দেশে আসছে বলে ধারণা করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে প্রবাসীরা তুলনামূলক ভালো রেট পান। সরকার প্রবাসী আয়ের ওপর ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিলেও তা এখনও যথেষ্ট প্রলুব্ধকর নয়।
ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা, সময়ক্ষেপণ ও কম রেটও হুন্ডির প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুন্ডির সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে প্রবাসী রেমিট্যান্স রেট নির্ধারণে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে:
-
দেশভিত্তিক আলাদা রেট নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তা সংশ্লিষ্ট দেশের হুন্ডি রেটের চেয়েও বেশি হয়।
যেমন: মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রেমিট্যান্স রেট। -
প্রতিদিন রেট মনিটরিং ও আপডেট করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
-
বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিট্যান্স হাউজগুলোর সহায়তায় হুন্ডি রেট তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত বিশ্লেষণ করতে হবে।
এতে করে ব্যাংকিং চ্যানেল প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং প্রবাসীরা ধীরে ধীরে হুন্ডি বর্জন করে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন।
মা/ম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: