যে ৬টি খাবার খেলে হতে পারে ক্যানসার!

ক্যানসার একটি জটিল ও বহুমাত্রিক রোগ। নানা ধরণের ক্যানসার রয়েছে এবং এসব রোগের পেছনে রয়েছে অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ। যদিও জেনেটিক বা বংশগত কারণের ভূমিকা রয়েছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে—বাহ্যিক কিছু বিষয়, বিশেষ করে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস, ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বাহ্যিক কারণে হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস। এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো শরীরের কোষে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান (কার্সিনোজেন) তৈরি করতে পারে, কিংবা ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা তৈরি করে। হেলথলাইনের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এমন ৬টি খাবারের উল্লেখকরেছেন, যেগুলো নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
যে খাবারগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
১. প্রসেসড মাংস: যেসব মাংস ধূমায়িত, লবণাক্ত, সংরক্ষিত বা ক্যানজাত করা হয়, সেগুলোকে প্রসেসড মাংস বলা হয়। যেমন: সসেজ, সালামি, হটডগ, কর্নড বিফ, বিফ জার্কি ইত্যাদি। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাংসে এন-নাইট্রোসো যৌগ ও পিএএইচ নামক কার্সিনোজেন তৈরি হয়, যা কোলন, পাকস্থলী ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. ভাজাপোড়া: অনেকেই বিভিন্ন ভাজাপোড়া পছন্দ করেন। এই তালিকায় আছে আলু ভাজা, চিপস, পাকোড়া, চপ—এসব স্টার্চ জাতীয় খাবার বেশি তাপে ভাজার সময় অ্যাক্রিলামাইড নামক ক্ষতিকর উপাদান তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাক্রিলামাইড ডিএনএ ক্ষতি করে এবং কোষ ধ্বংসের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. অতিরিক্ত সেদ্ধ বা পোড়া খাবার: চিকিৎসকদের মতে খাদ্য তারিকায় অতিরিক্ত সেদ্ধ এবং পোড় আখাবার না রাখাই ভালো। বিশেষ করে মাংস অতিরিক্ত আগুনে গ্রিল, বারবিকিউ বা প্যান ফ্রাই করলে পিএএইসএ ও এইচসিএ নামের ক্যানসার জনিত যৌগ তৈরি হয়, যা কোষের ডিএনএ পরিবর্তন করে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এই জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো বলছেন চিকিৎসকরা।
৪. দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, চিজ এই পরিচিত দুগ্ধজাত খাবারগুলো অনেকের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় স্থান পায় পুষ্টির উৎস হিসেবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ২০২০ সালের একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের ফলে দেহে ইনসুলিন-জাতীয় গ্রোথ ফ্যাক্টর ১ (আইগিএফ-ওয়ান) নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই আইগিএফ-ওয়ান হরমোন প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষ বিভাজন বা বিস্তারকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
৫. চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট: চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন কোমল পানীয়, সাদা পাউরুটি, পেস্ট্রি, সাদা ভাত বা মিষ্টি সিরিয়াল—এসব নিয়মিত খেলে শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতা দেখা দিতে পারে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুটি শারীরিক অবস্থা দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা ক্যানসার সৃষ্টির অন্যতম কারণ হতে পারে। এমনকি, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে ডিম্বাশয়, স্তন ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি যুক্ত বলেও দেখা গেছে। পাশাপাশি, রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনাও বাড়াতে পারে।
৬. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল পান করলে তা শরীরে ভেঙে গিয়ে অ্যাসিট্যালডিহাইড নামক একটি রাসায়নিক যৌগে পরিণত হয়, যা কার্সিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনা গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাসিট্যালডিহাইড ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এ ছাড়া এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দেয়, ফলে প্রিক্যান্সারাস বা ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। একই সঙ্গে অ্যালকোহল পানের ফলে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে যায় যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করে।
জ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারে এমন উপকারী উপাদান থাকে যা শরীরকে ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
শা/আ/দি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: