sportsmaster@gmail.com রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২

সিভি বানানো ও আবেদনের সময় যা মাথায় রাখবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২১:০৭ পিএম

ছবি : গ্রাফিক্স

অনেক কষ্ট করে একটা চমৎকার সিভি তৈরি করলেন, এরপর বিভিন্ন জায়গায় সেটি ইমেইলে পাঠাচ্ছেন কিংবা জব পোর্টালে আপলোড করছেন। কিন্তু সপ্তাহ পেরোলেও রেসপন্স পাচ্ছেন না। ইন্টারভিউ তো দূরের কথা, অনেক সময় তো রিজেকশন ইমেইলটাও আসে না। আপনার চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে এমন মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। মনে তৈরী হতে পারে সন্দেহ— আমি কি যোগ্য না? আমার কোথাও ভুল হচ্ছে?

ক্যারিয়ারের শুরুতে বা ট্রানজিশনের সময় এই হতাশা অনেকের মধ্যেই কাজ করে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে জরুরি হলো নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করা। আপনার আবেদন করার স্টাইল হয়তো যথেষ্ট নয়। যাদের কাছে আবেদন করছেন, তারা প্রতিদিন শত শত এমন ইমেইল পাচ্ছেন। আপনি যেন সেই ভিড়ে হারিয়ে না যান, সেজন্য কিছু বিষয় ভেবে দেখতে হবে।

আপনার CV কি সত্যিই চাকরি প্রাপ্তির উপযোগী?

একাডেমিক সিভি আর ইন্ডাস্ট্রি সিভির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা শুধু আমাদের ডিগ্রি আর কোর্স লিস্ট দিয়ে CV সাজিয়ে ফেলি, কিন্তু হায়ারিং ম্যানেজার খোঁজে সমস্যার সমাধানকারীকে—এমন কাউকে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে মান যুক্ত হবে। আপনি কিভাবে কোনো প্রকল্পে অবদান রেখেছেন, কি কি সমস্যা সমাধান করেছেন, টিমে কিভাবে কাজ করেছেন—এই ধরনের ইনফো থাকা উচিত। শুধুমাত্র "I am a quick learner" বা "hardworking" বললে চলবে না, সেটা প্রমাণ করতে হবে উদাহরণ দিয়ে।

আপনি কি প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের সিভি কাস্টমাইজ করছেন?

একই CV সব জায়গায় পাঠালে তা সব জব রোলে খাপ খাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানে হয়তো তারা "communication skill" বেশি চায়, আবার কোথাও "data analysis" জরুরি। আপনি যদি সেসব প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের স্কিল হাইলাইট না করেন, তাহলে আপনার আবেদন হয়তো চোখেই পড়বে না। ATS (Applicant Tracking System) অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়, যেটা নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড না থাকলে CV-ই স্ক্যান করে না। আপনি যদি কাস্টমাইজড না করেন, তাহলে হয়তো মানুষ তো দূরের কথা, মেশিনও আপনার ফাইল খুলছে না।

কভার লেটার পাঠাচ্ছেন তো?

অনেক সময় রেসপন্স না পাওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে কাভার লেটার না পাঠানো। যদিও অনেকেই ভাবে কাভার লেটার অতিরিক্ত কিছু নয়, কিন্তু অনেক নিয়োগদাতা এখনো এটিকে গুরুত্ব দেয়। কাভার লেটার আপনি কেন সেই কোম্পানির জন্য উপযুক্ত, কেন আপনি ওই পজিশনের প্রতি আগ্রহী—এসব সংক্ষেপে জানায়। এটা আপনাকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। শুধু বায়োডেটা না দিয়ে নিজের কণ্ঠস্বর যুক্ত করা মানে আপনি উদ্যোগী ও আগ্রহী—এই বার্তাটা পৌঁছায়।

অনলাইন প্রোফাইল ঠিকঠাক রাখতে হবে

লিংকডইন প্রোফাইল আজকের দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নিয়োগকারী আপনার সিভি পাওয়ার পর প্রথমেই আপনার লিংকডইন চেক করে। সেখানে আপনার ছবি, হেডলাইন, সামারি, অভিজ্ঞতা ও স্কিলসেকশন ঠিক আছে কি না, সেটা দেখে তারা প্রথম ধারণা তৈরি করে। আপনি যদি সেখানে অ্যাকটিভ থাকেন, পোস্ট করেন, কনটেন্ট শেয়ার করেন—তাহলে আপনার উপস্থিতি আরও দৃঢ় হয়।

নেটওয়ার্কিং

অনেক সময় চাকরির বাজারে যোগাযোগ বা রেফারেল বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন, অন্তত জানাতে পারেন যে আপনি আবেদন করেছেন—তাহলে সেই ব্যক্তি হয়তো আপনার রিজুমে রিক্রুটারের চোখে আনতে পারেন। এটাকে ভুলভাবে নিলে চলবে না—এটা ধূর্ততা নয়, বরং বাস্তবতা। আপনি কতটা অ্যাকটিভলি নেটওয়ার্ক করছেন, সেটাও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

 

চাকরি পাওয়া কেবল যোগ্যতার প্রশ্ন নয়—এটা কখনো কখনো সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার দক্ষতাও। তাই হতাশ না হয়ে নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করুন। সময় দিন, কৌশল ঠিক করুন, নিজের প্রতিক্রিয়া গুছিয়ে নিন। আপনি যে পরিশ্রম করছেন, সেটার প্রতিদান একদিন অবশ্যই আসবে—শুধু লেগে থাকতে হবে।

স্মরণে রাখুন—আপনার যোগ্যতা তখনই কাজে আসবে, যখন আপনি সঠিকভাবে সেটা তুলে ধরতে পারবেন। আর সেখানেই প্রস্তুতি সবচেয়ে জরুরি। রেসপন্স না পেলেও থামবেন না—আপনার সময় আসবেই।

 

মা/ম

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর