sportsmaster@gmail.com রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২

নীরব ইতিহাসের প্রাচীন পাঠশালা পাহাড়পুর

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫ ২০:০৭ পিএম

ফাইল ছবি

শুধু ইট-পাথরের স্তূপ নয়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার যেন দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছরের এক নিঃশব্দ গল্প নিয়ে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ছোট্ট পাহাড়পুর গ্রামে যখন পৌঁছালাম, তখন চারদিকে ছিল সুনসান নীরবতা। কিন্তু সেই নীরবতা ভেদ করে যেন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম—ভিক্ষুদের মন্ত্রোচ্চারণ, শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর ইতিহাসের গুঞ্জন

বিহারের মূল প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, সময় থমকে গেছে। সামনে বিশাল এক চত্বর, যার প্রতিটি ইটে লুকিয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার ছোঁয়া। কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরটি আজও যেন অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছে চারপাশের ১৭৭টি ভিক্ষু কক্ষ।

মাটির ফলকচিত্রগুলো দেখে থমকে যেতে হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় মূর্তি আর জীবনের দৃশ্যাবলি এত নিপুণভাবে পোড়ামাটির ফ্রেমে বাঁধা—যেন শিল্পীর নিঃশ্বাস এখনো লেগে আছে।

চোখে পড়ে গেল ‘সন্ধ্যাবতীর ঘাট’। জনশ্রুতি আছে, এই স্থানে নাকি এক রহস্যময় রমণী সন্ধ্যার আলোয় ঘোরা করতেন। আবার কেউ বলেন, সত্যপীরের ভিটায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বলত, যে আলোয় পথ দেখত ভিক্ষুদের। ইতিহাস আর লোককাহিনির এমন মেলবন্ধন যেন পাহাড়পুরকে আরো বেশি রহস্যময় করে তোলে।

দূর থেকে কিছু শিশুর কণ্ঠস্বর ভেসে আসছিল—তারা দৌড়াচ্ছে ভাঙাচোরা পথ ধরে, ঠিক যেভাবে কোনো এককালে তিব্বত বা চীন থেকে আসা ছাত্ররা দৌড়ে যেতেন কক্ষ থেকে পাঠশালায়। সময় বদলেছে, মানুষ বদলেছে, কিন্তু এই বিহার এখনো একই রকম বিশাল, ধীর ও গম্ভীর।

প্রস্থানপথে দেখলাম একটি ছোট দোকানে রাখা আছে নওগাঁর বিখ্যাত সন্দেশ। মনে হলো, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের এক মিষ্টি যোগসূত্র। সেই সন্দেশের এক টুকরো মুখে দিয়ে মনে হলো, ইতিহাস শুধু বইয়ে নয়—এমন জায়গায় এসে তবেই তা হৃদয়ে ঠাঁই পায়।

মা/ম

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর