sportsmaster@gmail.com রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২

মতামত

যে কারনে বাংলাদেশের নারী উদ্যাক্তারা পিছিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২০:০৭ পিএম

ছবি : গ্রাফিক্স

গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের (জিইএম) তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন ৬৫ কোটির বেশি নারী উদ্যোক্তা আছেন। এঁদের একটি বড় অংশ কোনো না কোনো কোম্পানির মালিক। অন্যদিকে মোট পুরুষ উদ্যোক্তা ৭৭ কোটির মতো। আনুপাতিক হিসাবে পুরুষের তুলনায় নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা কম নয়। তবে এই সংখ্যার আড়ালে যে সত্য চাপা পড়ে তা হচ্ছে, নারী উদ্যোক্তাদের দুই-তৃতীয়াংশই তাঁদের পথচলার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে। তাহলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক কম।

তবে এখানেও আশার কথা আছে। তা হলো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেসব নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, তার ৬০ শতাংশই নারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর মনে করেন, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির পথে প্রভাব রাখছে। উদ্যোক্তা হিসেবে অর্জিত অর্থ নারীদের ব্যক্তিগতভাবে স্বাবলম্বী করছে। এটি একই সঙ্গে তাঁদের এবং আরও অনেকের পরিবারকে সচ্ছল করে তুলছে। এভাবে নারীর ক্ষমতা ও নেতৃত্ব তাঁদের ক্রমেই পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিচ্ছে। এটি প্রকারান্তরে সমাজে মানবিক ও সমতানির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিরও বিকাশ ঘটাচ্ছে।

তবে অধ্যাপক তারিকের মতে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এ ক্ষেত্রে নারীকে সামাজিক অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। পারিবারিক ও আর্থিক কাঠামোয় এখনো নারীকে পুরুষের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। নতুন কিছু করার ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের নেতিবাচক কথা ও মনোভাবও বাধা হয়ে আসে। ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নারী পিছিয়ে থাকেন, যেহেতু সম্পদের মালিকানা প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁর হাতে থাকে না।

শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণেও নারী সামাজিক মর্যাদায় পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী মেয়েশিক্ষার্থীর হার ৫৫ শতাংশের মতো। উচ্চমাধ্যমিকে এসে তা কমে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। আর উচ্চশিক্ষায় পুরোপুরি ধস নামে; এই হার ৩৭ শতাংশের সামান্য বেশি। দারিদ্র্য, বিয়ে কিংবা অন্যান্য সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নারীকে শিক্ষায় পিছিয়ে রাখে, কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করে।

আমাদের দেশে চাকরির বাজার যখন সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান একটি সমাধান। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও ঋণসহায়তা অতি দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে; কিন্তু সমস্যা রয়ে যায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের। এঁদের অধিকাংশই উচ্চমাধ্যমিক কিংবা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন; কিন্তু বিকল্প কর্মের কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না। মূলধনের অভাবে তাঁদের অনেককে অনলাইন ও ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা যায়।

নারী উদ্যোক্তারা সাধারণত অল্প মুনাফা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য এটিই তাঁদের জন্য সহজ উপায় হয়। আবার ঋণসুবিধায় এগিয়ে থাকার দরুন পুরুষ বড় পরিসরে কাজ শুরু করতে পারেন। নারীকে সেখানে ছোট বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করতে হয়। ফলে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তার মধ্যে সম্পদের ব্যবধান দিন দিন বাড়তে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা রকম হতাশা দেখা যায়। উচ্চশিক্ষা তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারটি কতটুকু নিশ্চিত করবে, এ নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত থাকেন। বিয়ে হয়ে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রেজাল্টে পুরুষ শিক্ষার্থীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েন। আবার অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করার পরপরই যেসব নারী শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যায়, তাঁদের অনেকেই আর চাকরি বা অন্য কাজে যুক্ত হন না। পারিবারিক অসহযোগিতা এর একটি কারণ হতে পারে।

উচ্চশিক্ষিত নারীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা আমাদের দেশে সহজ নয়। কারণ, পল্লি ও প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের কথা চিন্তা করে সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ ও ঋণদান কর্মসূচি আবর্তিত হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়া নারীরা অর্থনীতিতে আরও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন।

নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য মূলত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কথা চিন্তা করা হয়। এর বাইরেও নারীর অংশগ্রহণের যে বিচিত্র ক্ষেত্র ও সুযোগ রয়েছে, তা সামনে আনা দরকার। নারীর স্ব–উদ্যোগী হয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে, ওষুধ ও শিল্পকারখানার পণ্য বা কাঁচামাল সরবরাহ কিংবা গৃহনির্মাণ ও অফিস ডেকোরেশনে। আসলে কাজের ক্ষেত্র এত বিপুল যে তার তালিকা এখানে দেখানো নিষ্প্রয়োজন।

           

মা/ম

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর