বউ পেটানোয় দেশের শীর্ষে বরিশাল, ২য় অবস্থানে খুলনা

যেখানে ঘর হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, ভালোবাসার পরিবেশ- সেই ঘরই পরিণত হয়েছে নীরব এক কারাগারে। যেখানে একজন নারী যিনি সমাজে মা, স্ত্রী, কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তার সেই পরিচয়ের কোনো মর্যাদা থাকে না। বরং তিনি সহ্য করেন অব্যাহত নির্যাতন, যা অনেক সময় তাকে পরিণত করে চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া এক ‘শিকারী’তে।
দেশের ঘরে ঘরে নারী নির্যাতন এখন এক নির্মম বাস্তবতা। প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন—চাকরি থেকে ফিরে আসার পর, রান্নাঘরে, কিংবা নিঃসঙ্গ রাতে। কিন্তু সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্য হলো, এসব নির্যাতনের বড় একটি অংশ সংঘটিত হচ্ছে সেইসব পুরুষের হাতে, যাদের নারীরা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন—তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে নারীর প্রতি সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। বরিশালে ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যা সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।
জরিপ অনুযায়ী বরিশাল ও খুলনার পর ঘরোয়া সহিংসতার উচ্চ হারে রয়েছে চট্টগ্রাম (৭৬%), ময়মনসিংহ (৭৫%), রাজশাহী (৭৪.৭%) ও রংপুর (৭৪%) বিভাগ। এমনকি তুলনামূলকভাবে কম সহিংসতার তালিকায় থাকা সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অর্থাৎ, দেশের কোনো বিভাগেই ঘরোয়া সহিংসতার হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি—যা প্রমাণ করে, এ সমস্যাটি সার্বিক এবং এটি মোকাবিলায় এখনই জরুরি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
মা/ম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: